বাচ্চু শেখ (৩৫), পেশায় বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক। একটি চুরির ঘটনায় পুলিশ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে তাকে গ্রেফতার করে। হেফাজতে থাকা অবস্থায় বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনি মারা যান।
বাচ্চু বাগেরহাট মোড়েলগঞ্জের বলইগুনিয়া ইউনিয়নের আশরাফ আলী শেখের ছেলে। স্ত্রী শিল্পী আক্তার (৩০) ও একমাত্র ছেলে তামীম শেখকে (৫) নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়েশার মার গলির জাকির হোসেনের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন।পুলিশের ভাষ্যে, বাচ্চু শেখ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে পরিবারের দাবি, পুলিশের নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরের বন্দর এলাকায়। বাচ্চু শেখ ওই এলাকার আবদুল্লাহ পরিবহনের বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।নিহতের স্ত্রী শিল্পী আক্তার পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক সুজন বেলা ১১টার দিকে শ্যাভরন ডায়াগনিস্ট ক্লিনিকের বিপরীতে আবদুল্লাহ পরিবহনের কাউন্টার থেকে আমার সুস্থ স্বামীকে বিনা দোষে ধরে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করে বিকেলের মধ্যেই তাকে মেরে ফেলেছে।’
বাচ্চু শেখের বৃদ্ধ বাবা আশরাফ আলী শেখ পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘তিন দিন আগে মোড়লগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামে ছেলের বাসায় বেড়াতে এসেছি। আগামীকাল শুক্রবার বাচ্চুর একমাত্র ছেলে তামীম শেখ ও স্ত্রী শিল্পী আক্তারকে নিয়ে দেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। একদিন আগেই এখন ছেলের লাশ নিয়ে বাড়িতে যেতে হচ্ছে।’
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাচ্চুকে আটকের খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে থানায় ছুটে যাই। গিয়ে দেখি থানার মেঝেতে পড়ে ছেলে আমার বুক ধরে ছটফট করছে। অনেক অনুরোধের পর তাকে পুলিশের গাড়িতে করে থানার উপ-পরিদর্শক সুজনসহ অন্যরা নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হয়। পথে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ছেলে হত্যার বিচার কার কাছে দেব? কার আদালতে বিচার চাইব। আল্লাহর আদালতের চেয়ে বড় কোনো আদালত নেই। তার কাছেই ছেলে হত্যার বিচার দিলাম।’চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত ডিসি (উপ-কমিশনার) মির্জা সায়েম মাহমুদ পরিবর্তন ডটকমকে জানান, বাঘেরহাটের মোড়লগঞ্জ থেকে আবদুল্লাহ পরিবহনে পাঠানো প্রায় ৫ লাখ টাকা মূল্যের তামার পাখা চুরি হয়ে যায়। ওই চুরির ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেন পাখার মালিক। এই ঘটনায় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বাচ্চু শেখকে আটক করা হয়।
তিনি দাবি করেন, দুপুরের পর বাচ্চু অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ প্রথমে বন্দর হাসপাতালে নেয়। সেখানকার চিকিৎসক তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক বাচ্চুকে মৃত ঘোষণা করেন।মির্জা সায়েম বলেন, ‘বাচ্চুকে থানায় আনার পর কোনো নির্যাতন করা হয়নি। বুকের ব্যথার কারণে হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছেন বাচ্চু।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর জহিরুল ইসলাম পরিবর্তন ডটকমকে জানান, হাসপাতালে আনার আগেই বাচ্চুর মৃত্যু হয়েছে। তার বাবা আশরাফ আলী শেখ ময়নাতদন্ত না করার জন্য অনুরোধ করেন। পরে সুরতহাল রিপোর্ট করেই লাশ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
বন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওসমান গণি জানান, বুধবার রাতে বন্দর থানায় মালামাল চুরির অভিযোগ এনে একটি মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার চরপাথর ঘাটা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে আবদুল হাই। পরে মামলাটি থানার উপ-পরিদর্শক সুজনকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক সুজন পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বাচ্চু শেখকে গ্রেফতারের পর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। পরে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’এদিকে, এ ঘটনা জানাজানি হলে সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিসি-বন্দর জোন) আবু সায়েম, এডিসি আরেফিন জুয়েল ও এসি কামরুল হাসান চমেকে ছুটে যান। সেখানে উপস্থিত থেকে তারা বাচ্চুর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেন।
উৎসঃ পরিবর্তন